বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্যে দিয়েই শেয হল রাজ্যের পুরভোট। নির্বাচনে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও হিংসার অভিযোগ তুলে সোমবার ১২ ঘণ্টা বাংলা বন্ধের ডাক দিল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি(BJP)। অন্যদিকে রাজ্য প্রশাসনের(Nabanna) তরফে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হল, সোমবার বাংলায় কোনও বন্ধ হবে না। কারণ বনধ সংস্কৃতি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) নীতি নয়। সরকারি-বেসরকারি অফিস থেকে স্কুল-কলেজ-দোকানপাট-গাড়ি-ঘোড়া চলাচল সবই স্বাভাবিক থাকবে। তাই সরকারি কর্মীরা হাজিরা না দিলে বেতন কাটা যাবে।
রবিবার ভোটগ্রহণ-পর্ব মেটার পর রাজ্য বিজেপি-র তরফে ডাকা বন্ধের মোকাবিলায় জেলাশাসক, জেলার পুলিস সুপার, ও পুলিস কমিশনারদের নিয়ে নবান্নে জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। এরপরই সোমবার রাজ্যে কোনও বনধ হবে না বলে ঘোষণা করা হল নবান্নের তরফে। রাজ্যের ১০৮ পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। নবান্নের তরফে স্পষ্ট ঘোষণা, সাধারণ মানুষকে জবরদস্তি বন্ধ(Bandh) মানতে বাধ্য করা হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
নবান্ন থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে(Notification) বলা হয়েছে, বন্ধের কারণে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-জীবিকায় প্রভূত প্রভাব পড়ে। তাই এই সংস্কৃতি রাজ্য সরকারের ‘নীতি-বিরুদ্ধ’। তাই, রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিদিনের মতোই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, দোকান, বাজার, কারখানা সবই স্বাভাবিক নিয়মে চলবে এবং যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক রাখা হবে। এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বন্ধের কারণে কোনও কর্মচারী ছুটি পাবেন না এবং অনুপস্থিত থাকলে বেতন কাটা যাবে।
রবিবার ভোটপর্ব যখন শেষের মুখে, তখনই সাংবাদিকদের ডেকে বনধের ঘোষণা করলেন বঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। ভোট মেটার পরও অশান্তি খবর এসেছে। উত্তর ২৪ পরগনা কামারহাটিতে গুলি চলার অভিযোগ। গুলিবিদ্ধ কামারহাটি ফাঁড়ির এএসআই।
রবিবার ছিল রাজ্যের ১০৮ পুরসভার নির্বাচন। এর মধ্যে একাধিক পুরসভা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জিতে নিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। বাকি পুরসভাগুলিতেও ভাল ফলের আশায় তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই দিনভর নানা অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। আর ভোটপর্ব মিটতে না মিটতেই বাংলা বন্ধের ডাক দিল গেরুয়া শিবির। বিজেপির ডাকা বনধের তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। সোমবার বিরোধীদের ডাকা বনধের কোনও প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন রাজ্যের মন্ত্রীরা। সবকিছু সচল থাকবে বলে জানিয়েছে নবান্ন। এই আবহেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসকে সোমবার সকালে রাজভবনে তলব করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়(Jagdeep Dhankhar)।
বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, পুরসভা ভোটে বিভিন্ন জেলা থেকে ২২৭ টি অভিযোগ রাজ্য বিজেপি দফতরে জমা পড়েছে। এমনকী নজিরবিহীনভাবে দলের রাজ্য সভাপতিও দুষ্কৃতীদের তাড়া করে অশান্তি রুখেছেন বলে জানান শমীকবাবু। সাংবাদিক বৈঠকে বালুরঘাট থেকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, খড়্গপুর থেকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং কাঁথি থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ভার্চুয়াল মাধ্যমে সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দেন। ভার্চুয়ালি ভাটপাড়া থেকে ছিলেন দলের সাংসদ অর্জুন সিংহ। শমীক ভট্টাচার্য জানান, বালুরঘাটে দুপুরের দিকে একটি বুথে ‘বহিরাগত’দের ঢুকতে দেখে গুন্ডাবাহিনীকে পাকড়াও করতে বাইক থেকে নেমে দৌড়ন সুকান্ত মজুমদার নিজে। তাঁদের বের করে দেন বুথ থেকে। অন্যদিকে ভাটপাড়ায় নিজের গড়রক্ষা করতে সকাল থেকেই টহল দেন অর্জুন সিং। পুলিসের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বারাকপুরের বিজেপি সাংসদও। বিজেপি-র দাবি, ১০৮ পুরসভাতেই নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। শাসক তৃণমূল সোমবার গায়ের জোরে ভোট করিয়েছে। বহু জায়গায় ভোট লুঠ হয়েছে। পুলিস কোথাও দর্শকের আচরণ করেছে কোথাও তৃণমূলকে সহযোগিতা করেছে। পুনর্নির্বাচনের (Repoll) দাবিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বিজেপি। দিনের শেষে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরেও যায় বিজেপি প্রতিনিধি দল। সেই দলে ছিলেন রাজ্য নেতা শিশির বাজোরিয়া, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। চিঠি দিয়ে ১০৮ পুরসভার ভোটই বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিজেপি।বন্ধ সফল করতে রাজ্যের সর্বত্র বিজেপি কর্মীরা পথে নামবেন বলেও গেরুয়া শিবিরের পক্ষে জানানো হয়েছে।
এদিকে বিজেপির ডাকা বন্ধের বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। দলের জাতীয় কমিটির সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ঠাণ্ডা ঘরে বসে বিজেপির ডাকা বন্ধেরর আমরা বিরোধিতা করছি। সোমবার সব কিছু সচল থাকবে। সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলে এমন কোনও কিছুকে সমর্থন করি না আমরা। মানুষকে বিপদে ফেলে অর্থনীতি ধ্বংস করার এই বন্ধের আমরা সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি।’
কলকাতার মেয়র ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সাফ কথা, ‘বাংলায় বন্ধের সংস্কৃতি নেই। বাংলায় কোনও বন্ধ হবে না।’ বাস-ট্যাক্সি চালকদের নির্দ্বিধায় রাস্তায় নামতে বললেন পরিবহণমন্ত্রী।
এদিকে ভোটপর্বে বিক্ষিপ্ত অশান্তির কথা জানিয়েও, নির্বাচন মোটের উপর শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করলেন রাজ্য পুলিসের ডিজি(DGP)মনোজ মালব্য। তিনি বলেন, ‘বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে। তবে মোটের উপর ভোটপর্ব শান্তিপূর্ণই ছিল। গুলি চালনার ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ৭৯৭ জনকে গ্রেফতারও করা হয়।’ পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী দলের উদ্দেশে ডিজি-র ‘বার্তা’, সোমবার জোর করে বন্ধ করানোর চেষ্টা করা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে পুলিস।
Leave a Reply