বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: রাজ্যেও হানা দিল ওমিক্রন। বিদেশ ফেরত ৭ বছরের বালকের শরীরের ওমিক্রন সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রই, স্বাভাবিকভাবে রাজ্যবাসীর করোনা আতঙ্কও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার ওমিক্রণ নিয়ে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘ওমিক্রণ খুব বেশি ভয়ংকর নয়। তবে আপনারা সকলে সতর্ক থাকুন।’
রবিবার ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পুরসভার ভোট। পুরভোটের প্রাক্কালে বুধবার ফুলবাগানে নির্বাচনী জনসভা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই রাজ্যে প্রথম ওমিক্রন আক্রান্ত মুর্শিদাবাদের শিশুটির প্রসঙ্গ তুলে আনেন তিনি। বলেন, ‘এবার ওমিক্রণ শুরু হয়েছে। আবু ধাবি থেকে একজন হায়দরাবাদ হয়ে কলকাতা এসেছে। একজন রোগী বিমানে থাকলে বাকি প্যাসেঞ্জাররা তাঁর সংস্পর্শে আসছে। তারপর তারা বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিশছে। ওমিক্রমণ মারাত্মক কিছু না। কিন্তু এটা ছোঁয়াচে বেশি। খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ে। তবে আমরা কোভিড মোকাবিলা করেছি। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি সবকিছু মোকাবিলা করেছি। শুধু এটাই বলব, আপনারা সতর্ক থাকুন।’
উল্লেখ করা যেতে পারে, বুধবারই হদিশ মিলেছে রাজ্যের প্রথম ওমিক্রণ আক্রান্তের। আবু ধাবি থেকে প্রথম হায়দরাবাদে এসেছিল শিশুটির পরিবার। সেখানে আরটি- পিসিআর পরীক্ষার জন্য শিশুটির লালারস সংগ্রহ করা হয়। বিদেশ থেকে আসায় জিনোম সিক্যুয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হয় লালারস। এদিকে আরটি পিসিআরের ফলাফলে জানা যায়, শিশুটি কোভিড পজিটিভ। আর বুধবার জিনোম সিক্যুয়েন্সিংয়ের রিপোর্টে জানা গিয়েছে শিশুটি ওমিক্রন ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত।
করোনা আক্রান্ত অবস্থায় হায়দরাবাদ থেকে ১১ ডিসেম্বর কলকাতায় ফেরে শিশুটি। সেখান থেকে বাড়ির গাড়ি করে জেলায় রওনা দেয় তারা। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, একজন কোভিড পজিটিভ কী করে নিয়ম ভেঙে হায়দরাবাদ থেকে বিমানে ওঠে? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কোনও কোভিড পজিটিভ রোগী বিমানে উঠতে পারে না। কিন্তু কী করে এমন ঘটনা ঘটল, তা স্পষ্ট নয়। তাই সমস্ত বিষয়টি লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রককে জানানো হচ্ছে।
এদিকে তেলেঙ্গানার এক জনস্বাস্থ্য আধিকারিকের বয়ান অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আবু ধাবি থেকে বিমানটি এসেছিল হায়দরাবাদে। প্রোটোকল মেনে এমিরেটসের ওই বিমানে আসা যাত্রীদের নমুনা সংগ্রহ করে তেলেঙ্গানার স্বাস্থ্য দফতর। আর সেই পরীক্ষার রিপোর্টেই জানা যায়, বাংলার এক বালক ওমিক্রন আক্রান্ত। তার বাড়ি এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদে। বুধবার সকালে ওই বালকের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পায় তেলেঙ্গানার স্বাস্থ্য সেই রিপোর্ট হাতে পেয়েই আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
সেই সতর্কবার্তা পেয়েই নড়েচড়ে বসে এ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। দ্রুত ওই বালকের সন্ধান শুরু হয়। দুপুরের মধ্যেই জানা যায়, তার বাড়ি মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানার বেনিয়াগ্রামে। খোঁজখবর নিয়ে স্বাস্থ্যভবন জানতে পারে, ওই বালকের পরিবার বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে সোজা মুর্শিদাবাদে গিয়েছে। এর পর যোগাযোগ করা হয় মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে। মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল বুধবার দুপুরে বলেন, ‘‘আবু ধাবি থেকে বিমানে হায়দরাবাদ আসে ওই বালকের পরিবার। তার পর কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সড়ক পথে ফরাক্কা থানার বেনিয়াগ্রামে এসে পৌঁছয়। যদিও এই মুহূর্তে আক্রান্ত বালক মালদহ জেলার কালিয়াচক থানা এলাকায় রয়েছে। সেখানে তার মামাবাড়ি। সেখানেই তার খোঁজে গিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর।’ বেনিয়াগ্রামকে ইতিমধ্যেই কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়েছে।
কলকাতা পুরভোটের প্রচারে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুধবার ওমিক্রন প্রসঙ্গ তুললেন। তিনি বলেন, ওমিক্রন নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এতে প্রাণ যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে করোনার এই ভাইরাস মারাত্মক ছোঁয়াচে হওয়ায় একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
Leave a Reply