বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন(war-torn Ukraine) থেকে এবার পরিত্রাণের জন্য নিজের দেশের কাছে কাতর আবেদন জানাল ভারতীয় পড়ুয়ারা(Indian Students)। শনিবারই প্রবাসে আটকে পড়া কয়েকজন ভারতীয় পড়ুয়ার কাতর কণ্ঠে মুক্তির আর্জি জানানো ভিডিও ট্যুইট করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি।এরপরই কেন্দ্রের কাছে তিনি দাবি করেন অবিলম্বে যেন এদের উদ্ধারের ব্যবস্থা হয়।প্রাণভয়ে পরদেশে বাঙ্কারে(bunker) আশ্রয় নিতে হয়েছে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া ছেলেমেয়েগুলিকে।
রাহুল গান্ধির ট্যুইট করা ভিডিওর আলোআঁধারি ছবি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আচমকা আঘাত থেকে বাঁচতে একমাত্র অন্ধকার বাঙ্কারই এখন ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে।সেখান থেকেই, ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাসের উদ্দেশে, বেঙ্গালুরু থেকে যাওয়া দুই পড়ুয়ার উদ্ধারের আকুতি স্পষ্ট কানে এসেছে। পাশাপাশি তারা ভিডিও মারফত জানিয়েছেন, দূতাবাসের ভারতীয় অফিসারদের তরফে এখনও তাদের মধ্যে কেউ, কোনওরকম সাহায্যই পাননি এবং তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগেরও আশা দেখছেন না।
আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের একজন বেঙ্গালুরুর(Bangalore)মেঘনা। তার কথা থেকেই((video message) জানা গেল ইউক্রেনের(Ukraine) বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভারতীয়দের অনেকেই ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাঙ্কারে(bunker) আটকে রয়েছেন। খাবার তো দূরের কথা, তেষ্টার জলটুকুও জোটেনি। আর বাঙ্কারে হাওয়া বাতাস ঢোকার রাস্তাটুকুও নেই বললেই চলে। ফলে শ্বাস নেওয়ায় এখন তাদের দায় হয়ে উঠেছে।মেঘনার আক্ষেপ, ‘আমরা বাঙ্কারে আটকে পড়েছি। আমাদের এখান থেকে বের করে দেশে পাঠানোর জন্য কোনও বিশেষ বিমানেরও ব্যবস্থা হয়নি।আমাদের সামনে পরিস্থিতি ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। অনুরোধ দয়া করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাহায্যের ব্যবস্থা করুন।’
অন্ধকার থাকলেও রাহুল গান্ধির ভিডিওতে বোঝা যাচ্ছে মেঘনার মতোই আরও অনেকেই দমবন্ধ অবস্থায় বাঙ্কারে রয়েছে। ভিডিওটি শেষ হচ্ছে মেঘনার ভাইয়ের আবেদন দিয়ে। বাচ্চা ছেলেটিও সরকারের কাছে তার দিদিকে ইউক্রেন(Ukraine)থেকে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করেছে। তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমার দিদি ইউক্রেনে আটকে রয়েছে। আপনারা কি ওকে একটি সাহায্য কতে পারেন না? আমি দেখতে চাই, ও দেশে ফিরছে।’
কষ্ট করলেও, মেগনাদের পরিবার পরিজন অন্তত এটুকু জেনে নিশ্চিন্ত যে খিদে-তেষ্টার কষ্ট সহ্য করেও, একটা নিরাপদ আশ্রয়ে আছে তারা। কিন্তু বহু ভারতীয় পডুয়াদের আবার তাও জোটেনি। ইউক্রেনে মেডিক্যাল পড়তে যাওয়া কয়েকজন ছাত্রী(medical students) বারবার সাইরেন(siren) বাজলেই, তারা দাঁড়াচ্ছেন অ্যাপার্টমেন্টের বেসমেন্টে। বোমার আওয়াজ একটু থামতে, চারদিক নিঝুম হলেই আবার ফিরে যাচ্ছেন উপরতলার নিজেদের ফ্ল্যাটে। আর যাদের তাও নেই, তারা প্রাণ বাঁচাতে এদিক এদিক দৌড় করছেন।
এদিকে রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে ইউক্রেনে আটকে পড়া হাজার হাজার ভারতীয় এখন সে দেশ ছেড়ে বেরোতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। পরিস্থিতি ক্রমশ কঠিন হতে থাকায় শনিবার ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসের তরফে ট্যুইট করে জারি হয়েছে নতুন নির্দেশিকা(advisory)। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারকে না জানিয়ে ইউক্রেনের সীমান্ত এলাকার দিকে যাওয়ার কেউ যেন চেষ্টাও না করেন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আটকে পড়া ভারতীয়রা দূতাবাস বা ভারতীয় আধিকারিকদের সঙ্গে আগাম যোগাযোগ ছাড়া যেন সীমান্ত এলাকাগুলির দিকে না যান। সেখানে থাকাই আপাতত নিরাপদ। যারা পূর্ব ইউক্রেনে রয়েছেন, তাঁদের বাড়ির ভিতর অথবা শেল্টারে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কিভের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। নয়া নির্দেশিকা জারির কারণ, দূতাবাস বা আধিকারিকদের অগোচরে, ভারতীয় নাগরিকরা যদি কোথাও যান বা চেক পয়েন্টে পৌঁছন তাহলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ কঠিন হয়ে পড়বে। ভারতীয় দূতাবাসের ট্যুইটে আরও বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনের বিভিন্ন সীমান্ত চেকপয়েন্টের পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর এবং কিভের দূতাবাস আমাদের নাগরিকদের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করে তাঁদের বের করে আনার ব্যাপারে আমাদের প্রতিবেশী দেশসমূহের দূতাবাসগুলির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে।’
নির্দেশিকা অনুযায়ী, ইউক্রেনের পশ্চিম অঞ্চল, আটকে পড়া ভারতীয়দের জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তাই বর্ডার চেকপয়েন্টের দিকে যাওয়ার পরিবর্তে সেখানেই থাকা শ্রেয়। পশ্চিম ইউক্রেনের শহরগুলিতে পানীয় জল, খাবার, থাকার জায়গা ও অন্যান্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা তুলনায় বেশি ও এই পরিস্থিতিতেও সহজলভ্য। তাই ইউক্রেন ছাড়ার তাগিদে চেকপয়েন্টগুলিতে যাওয়ার পরিবর্তে ইউক্রেনের এই অঞ্চল প্রবাসীদের জন্য নিরাপদ। এরসঙ্গে যাঁরা পূর্ব ইউক্রেনে রয়েছেন, তাঁরা যেখানে রয়েছেন, সেখানেই থেকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত, খাবার ও পানীয় জল সহ বেঁচে থাকার যেটুকু রসদ আছে, তা নিয়েই তাঁদের ধৈয্য ধরে যথাসম্ভব বাড়িতে বা শেল্টারেই থাকতে বলা হয়েছে। নয়া নির্দেশিকায় ভারতীয়দের শান্ত ও সংযত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। অযথা ঘোরাঘুরি বা বাড়ির বাইরে বেরোনো এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরাতে রোমানিয়া ও হাঙ্গেরিতে বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। পোল্যান্ড দিয়েও ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। আকাশপথে বিপদ থাকায় যথাসম্ভব ভারতীয়দের উদ্ধারে যথাসম্ভব সড়কপথের ব্যবহার হচ্ছে।
বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিঙ্গলা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, ‘ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার(evacuation) করে দেশে ফেরানোর নিরাপদ রাস্তা চিহ্নিত করা হয়েছে। সড়কপথে কিভ থেকে ৯ ঘণ্টায় পোল্যান্ড পৌঁছে যাওয়া যাবে। আর রোমানিয়া পৌঁছতে সময় লাগবে ১২ ঘণ্টার কাছাকাছি। রুটম্যাপও(routemap) তৈরি হয়ে গেছে।’ পাশাপাশি বিদেশমন্ত্রকের তরফে ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের সাহায্যার্থে খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন।
Leave a Reply