বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: ১৪ দিনে পড়ল রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia Ukraine war) । সকালে ইউক্রেনের ঘুম ভাঙছে গোলা গুলির শব্দে। দেশ ছেড়ে পালানোর হিড়িক চলছে বহুদিন ধরে। ভারত সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনছে তাঁদের নিজেদের দেশ। ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনছে। এরইমধ্যে সামনে এল এক সংবাদসংস্থার তোলা এক যন্ত্রণাদায়ক ভিডিও (video) । প্রতিবেশী পোল্যান্ডে (Poland) যুদ্ধভূমি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পথ পাচ্ছেন না ইউক্রেনীয়রা। ভিডিওতে দেখা যায় এক বালক দেশের সীমান্ত ছেড়ে ইউক্রেন পালানোর সময় কেঁদে ভাসাচ্ছে। তাঁর কান্না বিশ্বের নানা প্রান্তের নেটিজেনদের মন ছুঁয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক বালক তার জিনিসপত্র ব্যাগে নিয়ে সীমান্ত পেরোচ্ছে। তাদের গন্তব্য সীমান্তের পাশেই পোল্যান্ডের এক গ্রাম। রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে বাঁচতে এখন পোল্যান্ড তাদের নিশ্চিন্ত ঠিকানা।

১০ লাখেরও বেশি শরণার্থী রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে (Russia Ukraine war) বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যাওয়ায় পোল্যান্ড চাপের মুখে। লিভিভ থেকে আসা ট্রেনটি পোলিশ সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়ার সময়, শিশুরা জানালা দিয়ে উঁকি দেয়, পেছনে ফেলে আসা ভয়াবহতার কারণে তাদের কৌতূহল ম্লান হয় না।
আছে শুধু নারী ও শিশু। তাঁরা তাঁদের স্বামী, তাঁদের বাবা, তাঁদের ছেলেদের রেখে গেছেন ইউক্রেনে। লড়াই করার জন্য পুরুষদের থাকতে হবে। বিচ্ছেদের বেদনা প্রতিটি মুখেই জেগে আছে।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের (Russia Ukraine war) জেরে আনাস্তাসিয়া তাঁর ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে কিয়েভের বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। পরিবারটি লিথুয়ানিয়া পৌঁছানোর আশা করছে। আমরা এগিয়ে যাবো। আমরা এর মধ্য দিয়ে যাব, কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন তিনি। আমি আশা করি সবকিছু ঠিক হবে। এবং ইউক্রেনীয়রা (ukranian) জিতবে। আমি ফিরতে চাই। আমি বাড়ি যেতে চাই। এই হাহাকার সারা ইউক্রেনের।
প্রতিটি পরিবারের একই রকম ক্ষতি এবং ভয়ের গল্প রয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের (Russia ukraine war) প্রভাবে প্রথম সপ্তাহে ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনিয়ান দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের মতে, ৫ লাখেরও বেশি মানুষ পোল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছেন। আরও ১০ লাখ ইউক্রেনের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইইউ ধারণা করছে যে, আগামী সপ্তাহগুলোতে ৭০ লাখ ইউক্রেনীয় দেশত্যাগ করতে পারেন।
পোল্যান্ডে (Poland) ইতিমধ্যেই অনেক আশ্রয়প্রার্থী রয়েছেন এবং অনেক শরণার্থী বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে থাকছে, যা কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করেছে। অন্যদের স্কুল, হোটেল এবং গুদামে স্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। কিন্তু এটাই সম্পূর্ণ চিত্র নয়। অনেক ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
তাঁদের বিশ্বাস, পুতিনকে পরাজিত করব এবং সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। রাশিয়ান ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া যানগুলোকে আমরা সোজা নরকে পাঠাব।
রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী সংস্থা বলছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ লোক ইউক্রেন ছেড়েছেন। মঙ্গলবার (৮ মার্চ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে এমন তথ্য দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি।
এর আগে তিনি বলেন, কিয়েভ-মস্কোর চলমান যুদ্ধে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি ও দ্রুত সময়ে শরণার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।
এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, কেবল সাতদিনের মধ্যে আমরা দশ লাখ মানুষের ঢল দেখেছি। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের (Russia Ukraine war) জেরে ইউক্রেন থেকে তাঁরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র জোয়াং-আহ গেডিনি-উইলিয়ামসন বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনের জনসংখ্যার দুই শতাংশের বেশি অন্য দেশে পাড়ি দিতে চাইলে এই ঢল নেমেছে।
ইউক্রেনের দুই শহর মারিউপুল ও ভলনোভাক থেকে নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার দ্বিতীয় দফার চেষ্টার সময়ে শরণার্থীদের নিয়ে নতুন এই তথ্য দিলেন ফিলিপ্পো গ্রান্ডি।
স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, মালডোভা ও হাঙ্গেরি, হাজার হাজার শরণার্থীকে স্বাগত জানাচ্ছে। ইউক্রেনের শরণার্থীর সিংহভাগকে আশ্রয় দিয়েছে পোল্যান্ড। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশটিতে সাড়ে ছয় লাখ শরণার্থী প্রবেশ করেন।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনিস্ক সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সোমবার (৭ মার্চ) পোস্ট করা ভিডিওতে তিনি বলেন, আমি পালাইনি এবং ভীত নই। তিনি কিয়ভে (kyiv) আছেন।
তাঁর এই ভিডিও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনকে জোরালোভাবে প্রতিরোধ করছে ইউক্রেনের বাহিনী।
রাজধানী কিয়েভের নিরাপত্তায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে দেশটির সাধারণ নাগরিকও। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। বালুর বস্তা দিয়ে রাস্তার দুইপাশে তৈরি করা হয়েছে ব্যারিকেড। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সুসজ্জিত অস্ত্র হাতে দূরবিন দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় অন্তত ১০০ চেকপয়েন্ট বসিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়। অনেক স্থানে ভারী কংক্রিট দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে।
ইউক্রেনে সামরিক আভিযানের পরপরই কিয়েভের নিরাপত্তায় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় স্থানীয় নাগরিকদের অংশগ্রহণে প্রতিষ্ঠা করে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাহিনী। দেশকে ভালোবেসে অনেকেই অংশ নিয়েছেন এতে।
প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা জানান, দিন- রাত অস্ত্র নিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিচ্ছেন তাঁরা। প্রত্যেকের পরিচয় নিশ্চিত হতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে।
Leave a Reply