বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: ভগবান বিষ্ণু, যিনি হলেন এই মহাবিশ্বের রক্ষক। যুগে যুগে ভিন্ন-ভিন্ন অবতার রূপে তিনি এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন। ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের তৃতীয় অবতার হল বরাহ অর্থাৎ শূকর (pig)। এই শূকরের ভাষাকেই এবার ‘ডিকোড’ (decode) করা হল। এই অসাধ্যসাধন করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ডেনমার্কের (Denmark) বিজ্ঞানীরা। ডেনমার্কে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ (Artificial Intelligence) বা ‘কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা’ নির্ভর একটি অ্যালগরিদম সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে, যার নাম পিগ ট্রান্সলেটর। এই পিগ ট্রান্সলেটর সফটওয়্যার ৪০০টি শূকরের (pig) মুখনিঃসৃত চোদ্দোশোরও বেশি অভিব্যক্তিসূচক শব্দ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছে। যার মধ্যে একদিকে রয়েছে তৃপ্ত ও খুশি হওয়ার মতো ইতিবাচক অভিব্যক্তি। অন্যদিকে রয়েছে কষ্ট ও খিদে পাওয়ার মতো নেতিবাচক অভিব্যক্তিও।
‘ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেন’ (University Of Copenhagen) এর গবেষণা থেকে এই তত্ত্বই স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি শূকর যত প্রকার অভিব্যক্তিসূচক শব্দ করে থাকে, তার সবই যন্ত্রের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা সম্ভব। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক ডক্টর এলোডি ব্রিফার, যিনি মূলত ‘অ্যানিম্যাল কমিউনিকেশন’ (Animal Communication) নিয়ে কাজ করে থাকেন। তিনি দাবি করেছেন, এই ধরণের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ট্রান্সলেটরকে অ্যাপে পরিণত করার পর সেটিকে পশুপালকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া গেলে পশুপালনের পাশাপাশি পশুকল্যাণেও তা বিপ্লব এনে দিতে পারে। একই মতামত পোষণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী তথা গবেষক ও অধ্যাপক ডক্টর সিদ্ধার্থ জোয়ারদারও। তাঁর পর্যবেক্ষণ, এটি বাস্তবে কাজে লাগাতে পারলে প্রাণীচিকিৎসা ও প্রাণীপালনে বিপ্লব আনা সম্ভব। এর পাশাপাশি শূকর (pig) ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে এই অনুবাদক সফটওয়্যারের সফল প্রয়োগ করা সম্ভব হলে মানুষ-প্রাণী আন্তঃসম্পর্কেও প্রভূত পরিবর্তন আসবে।
এই প্রসঙ্গে ক্রিস নোলান (Chris Nolan) পরিচালিত ‘বেব’ (Babe) সিনেমাটির কথা উল্লেখ করতেই হয়। ‘বেব’ সিনেমাটির কথা মনে করলে আপনার অবশ্যই মনে পড়বে সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকা শূকরছানা (pig) সহ ‘জাঙ্গল বুক’ এর সমস্ত জন্তুদের অর্থাৎ বাগিরা, শের খান, ভালু, লক্ষা এদের সবাইকেই মানুষের ভাষায় কথা বলানো হয়েছিল। সিনেমায় ব্যবহৃত সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে বাস্তবে রূপ দিয়ে সেই রূপকথাকেই অবশেষে সত্যি করল বিজ্ঞান! জন্তু-জানোয়ারের ভাষা ডিকোড করার প্রক্রিয়া শুরু করলেন ডেনমার্কের বিজ্ঞানীরা। আর শুরুতেই বেছে নেওয়া হল বরাহনন্দনকে। বিশেষ এক ধরনের অ্যালগরিদম সফটওয়্যার কাজে লাগিয়ে চারশো শূকরের ভাষা নির্ভুলভাবে ‘ডিকোড’ করা হল।
ভাবতে অবাক লাগে, পশুপাখির হাসি-কান্না, সমস্ত অনুভূতি নিমেষে ‘ডিকোড’ হয়ে আমাদের কাছে পৌঁছবে। কে বলতে পারে অদূর ভবিষ্যতে চিড়িয়াখানায় গিয়ে আমরা বাঘের গর্জনের ভাষাকে পড়ে ফেলব না! অথবা পরিযায়ী পাখির কলতানের অর্থ উদ্ধার করতে পারবো না! এছাড়া বিড়ালের ম্যাও-ম্যাও, কুকুরের ঘেউ-ঘেউ তো আছেই। একথা সত্যি যে বাস্তবে, পশুপালন বা পোষ্যদের লালন করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পশুদের শারীরিক অবস্থাই গুরুত্ব পায়। তাদের মনের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখার কোনও উপায় এতদিন ছিল না বা কেউ চেষ্টাও করেননি। এখন থেকে এই পদ্ধতিতে পশু-পাখির শারীরিক অসুবিধার কথা জেনে নিতে পারলে পশুচিকিৎসকদেরও রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে অনেকটাই সুবিধা হবে।
ডক্টর এলোডি ব্রিফারের টিম সব মিলিয়ে প্রায় ৭৪১৪টি শূকরের (pig) ‘ঘোঁত ঘোঁত’ রেকর্ড করতে পেরেছেন। এর মধ্যে কষাইখানা ও পশুখামারে থাকা শূকরদের শব্দের নমুনা যেমন রয়েছে, তেমনই গবেষণার জন্য প্রস্তুত এনক্লোজারে রাখা শূকরের (pig) ভয়েস স্যাম্পলও রেকর্ড করা হয়েছে। সব নমুনা বিশ্লেষণ করেই ফলাফল হিসেবে আর্তনাদ, কষ্ট, কান্না, আনন্দ-উচ্ছ্বাসের শব্দক্ষেপণের ফারাক নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। জানা গিয়েছে, আর্তনাদের শব্দ অনেক তীক্ষ্ম ও দীর্ঘস্থায়ী। অন্যদিকে আনন্দের ডাক ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর স্পেলিংয়ে ভাঙা। ঠিক অনেকটা আমাদের হাসি-কান্নার মতোই।
Leave a Reply