বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: ক্রিকেটার থেকে বিজেপির (BJP) সাংসদ হয়েছিলেন কয়েক বছর আগেই। ২০১৯ সালে পূর্ব দিল্লি (East Delhi) লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের অরবিন্দ সিং লাভলি ও আম আদমি পার্টির অতীশিকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এবার দিল্লির দুস্থ ও গরিব মানুষদের জন্য সস্তায় খাবারের বন্দোবস্ত করলেন তিনি। মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে পূর্ব দিল্লিতে চালু হল ‘এক আশা জন রসোই’ (Jan Rasoi) ক্যান্টিন। ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবস থেকে শুরু হয়েছে এই ক্যান্টিন।
দক্ষিণ ভারতের ‘আম্মা রসোই’ (Amma Rasoi)-এর নাম অনেকের কাছেই সুবিদিত। এবার পূর্ব দিল্লিতে খুলতে ‘জন রসোই’ ক্যান্টিন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ‘এক আশা জন রসোই’ ক্যান্টিন তৈরির ঘোষণা করেছিলেন গম্ভীর। ২৬ জানুয়ারি পূর্ব দিল্লির কোন্ডলি বিধানসভার অন্তর্গত গান্ধীনগরের কৈলাস কলোনী বাস স্টপে শুরু হয়েছে প্রথম ক্যান্টিনটি। প্রতিদিন দুপুর সাড়ে এগারোটা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত চালু থাকবে এই ক্যান্টিন। গান্ধীনগর ছাড়া দিল্লির অশোকনগরেও খোলা হয়েছে আরও একটি ক্যান্টিন। এই ক্যান্টিনটি দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২:৩০ পর্যন্ত খোলা থাকবে। এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীকালে পূর্ব দিল্লি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১০টি বিধানসভা অঞ্চলে অন্তত একটি করে ‘জন রসোই’ ক্যান্টিন খোলার পরিকল্পনা রয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন গৌতম গম্ভীর।
করোনা অতিমারিতে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। বর্তমানে সব থেকে বেশি বিপদে রয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। সমাজের সর্বস্তরের মানুষদের জন্যই এই ক্যান্টিন চালু করেছেন গৌতম গম্ভীর। জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পটির খরচ চলবে পূর্ব দিল্লির সাংসদের ব্যক্তিগত আর্থিক অনুদানে। তাছাড়া ‘গৌতম গম্ভীর ফাউন্ডেশন’-ও (Gautam Gambhir Foundation) এর খানিকটা ব্যয়ভার বহন করবে। ক্যান্টিনগুলি পরিচালনার জন্য কোনরকম সরকারি অনুদান নেওয়া হবে না, তা স্পষ্টতই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গান্ধীনগর ও অশোকনগরের এই দুই ক্যান্টিনে রয়েছে সম্পূর্ণ আধুনিক পরিষেবা। মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে এই ক্যান্টিনগুলিতে খাবার পাওয়া যাবে। ক্যান্টিনগুলিতে চালু করা হয়েছে ‘টোকেন সিস্টেম’।খাওয়ার আগে সকালে ক্যান্টিন থেকেই সংগ্রহ করতে হবে টোকেন। তারপর সেই টোকেন দেখিয়ে দুপুরে খাওয়ার জন্য ক্যান্টিনে প্রবেশের অনুমতি মিলবে। খাওয়ার আগে সেই টোকেন ফেলতে হবে স্যানিটাইজার ভরা একটি পাত্রে। দাঁড়িয়ে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে মানা হয় দূরত্ববিধিও।
এখানকার খাবারের মেনুতে রয়েছে ভাত, মুসুর ডাল ও সবজির তরকারি। গান্ধীনগরে রয়েছে এশিয়ার সবথেকে বড় পাইকারি জামাকাপড়ের দোকান ও বাজার। ফলে বহু মানুষ এই অঞ্চলে কাজ করতে আসেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই মূলত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গান্ধীনগর ও অশোকনগর-দু’জায়গার ক্যান্টিনেই একসঙ্গে বসে খেতে পারবেন প্রায় ১০০ জন মানুষ। সেই কারণেই তৈরি করা হয়েছে উপযুক্ত পরিকাঠামো। তবে বর্তমানে কোভিডের প্রকোপ ও অতিমারি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে একসঙ্গে ৫০ জন মানুষের বেশি খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে এই ক্যান্টিনে খাওয়ার অন্যতম শর্ত হল, এখান থেকে খাবার কেউ বাইরে নিয়ে যেতে পারবেন না, ক্যান্টিনে বসে খাবার খেতে হবে।
‘জন রসোই’ (Jan Rasoi) ক্যান্টিনের দেওয়ালে দেখা যাবে গৌতম গম্ভীরের ক্রিকেট জীবনের নানা স্মরণীয় কীর্তির ছবি। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ও ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে তাঁর ম্যাচ উইনিং ইনিংসের ছবিও থাকবে সেখানে। প্রসঙ্গত, এর আগে দিল্লিতে এই ধরনের ক্যান্টিন চালু করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। তবে সেখানে ১ টাকার বদলে ১০ টাকার বিনিময়ে খাবার মিলতো। কিন্তু এবার মাত্র ১ টাকার বিনিময়েই মিলবে দুপুরের খাবার।
‘জন রসোই’ ক্যান্টিন চালু প্রসঙ্গে পূর্ব দিল্লির সাংসদ গম্ভীর রজানিয়েছেন, ‘আমি সবসময় মনে করি, জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্যকর ও ভাল গুণমানের খাবার পাওয়ার অধিকার আছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও (Narendra Modi) লক্ষ্য, দেশে যেন একজনও অনাহারে না থাকেন। এটা দেখে খুব কষ্ট হয় যে, গৃহহীন, দুস্থ লোকেরা দিনে দু’মুঠো খাবারও পান না! সেই কারণেই আমার এই উদ্যোগ।’ সব মিলিয়ে ১ টাকার ক্যান্টিন ‘জন রসোই’-এ দুপুরে পেট ভরে খাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন পূর্ব দিল্লির অধিবাসীরা।
গৌতম গম্ভীরের এই উদ্যোগকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তাঁর সতীর্থ হরভজন সিংহ (Harbhajan Singh)। ট্যুইটারে একটি ভিডিওবার্তা পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘গৌতম, আশা করি তুমি ভালো আছো। আমি তোমাকে অভিনন্দন জানাতে চাই। তোমার ভাবনাকে অভিবাদন জানাতে চাই। মাত্র এক টাকায় ‘জন রসোই’-এর ব্যবস্থা করেছো তুমি, যাতে সবার পেট ভরে এবং কেউ যেন খালি পেটে না ঘুমোয়। তোমার এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। ভগবানের কাছে আমি প্রার্থনা করি, তিনি যেন তোমাকে এই রকম কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আরও শক্তি দেন।’ এখানেই থামেননি ভাজ্জি। এর পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ‘এইরকম মনোভাবের মানুষের আরও প্রয়োজন আছে। কারণ খাবার এমন একটা জিনিস যা সকলেরই প্রয়োজন। তাই আপনি কারও পেট ভরানোর দায়িত্ব নিলে সেটা পুণ্যের কাজ।’ শুধু দিল্লির মানুষই নন, গোটা দেশের মানুষ সাধুবাদ জানাচ্ছেন সাংসদ গৌতম গম্ভীরের এই মহৎ উদ্যোগকে।
Leave a Reply