বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: ১১ মার্চের পর থেকে কোভিড-১৯ ভারতে একটি সাধারণ রোগে পরিণত হতে পারে। এমনটাই দাবি করলেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অতিমারি বিভাগের প্রধান সমীরণ পাণ্ডা। দেশের প্রথম সারির এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অনুমান করা হচ্ছে যে ওমিক্রনের প্রভাব ভারতে ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে তিন মাস ধরে চলবে। অর্থাৎ ১১ মার্চের পর থেকে আমরা এই রোগ থেকে কিছুটা অব্যাহতি পেতে পারি।তাঁর মতে, ১১ মার্চের পর থেকে কোভিড-১৯ ভারতে একটি সাধারণ রোগ হয়েও দাঁড়াতে পারে। তবে তার জন্য অনেকগুলি বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। করোনার যদি কোনও নতুন রূপ আবির্ভূত না হয় এবং যদি ওমিক্রন রূপ ডেল্টা রূপকে প্রতিস্থাপন করে, তখনই করোনা একটি সাধারণ রোগে পরিণত হতে পারে বলে তাঁর দাবি।
ডেল্টা-ওমিক্রনের টি-২০ স্টাইলে ঝড়ো ইনিংসে নাজেহাল অবস্থা দেশ তথা রাজ্যেরও। কিছুটা কম সংক্রমণ হতেই ধীরে ধীরে নিউ নর্মালের দিকে দেশ তথা রাজ্য এগোতে শুরু করেছে। খুলেছে স্কুল কলেজ। কিন্তু এখনও নির্মূল হয়নি করোনা সংক্রমণ আগের থেকে কমলেও ভাবাচ্ছে মৃত্যু হার। বাংলাতে দৈনিক মৃত্যু সংখ্যা ৩০-এর ওপরেই। এখন সকলের মনেই একটাই প্রশ্ন কবে বিদায় নেবে করোনা। এবার কিছুটা আশার আলোর কথা শোনাল আইসিএমআর।
আইসিএমআর-এর শীর্ষ অধিকর্তা জানান আগামী মার্চেই বদলাতে পারে গোটা পরিস্থিতি। আরও কমতে শুরু করবে করোনা, প্যানডেমিক থেকে এন্ডেমিক হয়ে উঠবে এই মারণ ভাইরাস। তাতেই কিছুটা আশার আলো দেখছেন দেশের জনগণ।
আইসিএমআর-এর অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল ডঃ সমীরণ পাণ্ডা জানান, করোনার তৃতীয় ঢেউতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিল মহারাষ্ট্র, দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গে। আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। পাল্লা দিয়ে মৃতের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তবে বর্তমানে সেই সংখ্যা কমছে।আগামী মার্চ থেকেই আরও কমবে এই সংখ্যা। ধীরে ধীরে কমবে মৃত্যুও। আইসিএমআর-এর শীর্ষ অধিকর্তার দাবি, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংক্রমিতের সংখ্যা কমবে আরও। কমবে ভয়াবহতা। করোনা রূপ নেবে সাধারণ সর্দি, কাশির। তার ফলে সাধারণ মানুষ আবারও পুরনো জীবনযাত্রা ফিরতে পারবেন বলেই আশা। তবে মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইতি ঘটবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে সেই সঙ্গে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকেও নিয়েও কিছুটা চিন্তার সুর ধরা পড়েছে তাঁর গলায়।
শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৯৫২ জন। স্বস্তি দিয়ে কমল অ্যাকটিভ কেসও। বর্তমানে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৪৮। নিম্নমুখী দৈনিক পজিটিভিটি রেটও। এই মুহূর্তে ভারতে ৭.৯৮ শতাংশ করোনা পজিটিভ রেট। তবে চিন্তা বাড়াচ্ছে মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টাতেই যেমন মারণ ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন ১০৫৯ জন। দেশে এখনও পর্যন্ত কোভিডের বলি ৫ লক্ষ ১ হাজার ১১৪ জন। একই সঙ্গে সরস্বতী পুজোর দিন বঙ্গেও কমেছে সংক্রমণ। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনা পজিটিভ হয়েছেন ১৩৪৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। এদিকে করোনার দাপট কিছুটা কমতেই স্কুলে কলেজে সরস্বতী পুজোয় মেতে উঠেছে পড়ুয়ার। শহর থেকে জেলা সর্বত্রই একই ছবি ধরা পড়েছে।
রবিবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৭ হাজার ৪৭৪ জন। যা গতকালের তুলনায় যা অনেকটা কম। স্বস্তি দিয়ে কমল অ্যাকটিভ কেসও। বর্তমানে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১২ লক্ষ ২৫ হাজার ০১১। নিম্নমুখী দৈনিক পজিটিভিটি রেটও। এই মুহূর্তে ভারতে ৭.৪২ শতাংশ করোনা পজিটিভ রেট। তবে চিন্তা বাড়াচ্ছে মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টাতেই যেমন মারণ ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন ৮৬৫ জন। দেশে এখনও পর্যন্ত কোভিডের বলি ৫ লক্ষ ১ হাজার ৯৭৯ জন।
প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। তৃতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠলেও এখনও যে এই ভাইরাসের দাপট কমেনি, তা বলাই বাহুল্য। তবে এরই মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছেন করোনাজয়ীরা। গত ২৪ ঘণ্টায় সেরে উঠেছেন ২ লক্ষ ১৩ হাজার ২৪৬ জন। সুস্থতার হার ৯৫.৯১ শতাংশ।স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে গত ২৪ ঘন্টায় মোট করোনা পরীক্ষার সংখ্যা ১৪লক্ষ ৪৮ হাজার ৫১৩টি। দেশে এখনও পর্যন্ত মোট করোনা পরীক্ষার সংখ্যা ৭৪কোটির বেশি। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত দেশে প্রায় ১৬৯.৪৬ কোটির বেশি ডোজ করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৪২ লাখ (৪২,৯৫,১৪২) টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে।
Leave a Reply