ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ক্লিক (Klikk)-এ মুক্তি পেতে চলেছে পরিচালক সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’ (Prankenstein)। অ্যাকশন, থ্রিলার, সাসপেন্সে ভরপুর এই ওয়েবসিরিজে দেখা যাবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কে। টিকটিকির পর ফের ওয়েবসিরিজে (Web Series) দেখা যাবে কিংবদন্তি এই পরিচালককে।
এনিয়ে বঙ্গভূমি লাইভ-কে সময় দিলেন মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly)। শুনলেন শুভম সেনগুপ্ত।

বঙ্গভূমি লাইভ: একের পর এক ওয়েবসিরিজ। বড়ো পর্দায় অভিনয় থেকে ওয়েবসিরিজে (Web Series) অভিনয়, কতটা আলাদা?
কৌশিক: অভিনেতার কাছে ছোট প্ল্যাটফর্ম, বড়ো প্ল্যাটফর্ম কোনওটাই আলাদা নয়। অভিনেতার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল লেন্স। কতটা দূর থেকে দেখা হচ্ছে, কতটা কাছ থেকে দেখা হচ্ছে, সেই হিসেবে যদি তাঁর ক্ষমতা থাকে তবে তিনি অভিনয়ের মাপকাঠি নির্ধারণ করেন। কাজেই এটা সিনেমা না ওয়েবসিরিজ সেটা বড়ো ঘটনা নয়। তাই প্র্যাঙ্কেনস্টাইন (Prankenstein) হোক বা টিকটিকি, সবই আমার কাছে খুব আনন্দের এবং একটা দারুণ সময় কাটানোর মাধ্যম।
বঙ্গভূমি লাইভ: পোস্টারে দেখা যাচ্ছে এক হাতে পিস্তল, অন্যদিকে বাজারের ব্যাগ। এই অসঙ্গতিটা কেন?
কৌশিক: সোজা বাংলায় বললে, জীবনযুদ্ধ। বাজারের ব্যাগটা জীবন আর পিস্তলটা হল যুদ্ধ। একজন আসামীও তো খাবার খায়, বাজার করে। আবার যে লোকটা মধ্যবিত্ত জীবনে বাজার করছে, তাকেও যখন বন্দুক ধরতে হয়, তার পেছনে নিশ্চই কোনও গল্প থাকে। কী সেই গল্প, জানার জন্যই সাগ্নিকের প্র্যাঙ্কেনস্টাইন (Prankenstein)।

বঙ্গভূমি লাইভ: এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’, ‘প্র্যাঙ্ক’ এই বিষয়গুলো ভীষণ ভাবে উঠে আসছে। প্র্যাঙ্ক থেকেই প্র্যাঙ্কেনস্টাইন। এই প্র্যাঙ্ক বা ভাইরাল হওয়ার বাসনা, একটা কি লক্ষণরেখা থাকা দরকার নয়?
কৌশিক: মানুষ তাঁর লক্ষণরেখা টানতে পারেনি বলেই বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। মানুষ মানুষকে ভয় দেখিয়ে, বলা যেতে পারে প্রায় মৃত্যু ভয় দেখিয়ে আনন্দ পায়। এই আনন্দ পৈশাচিক আনন্দ। সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলে নাকি আবার লাইকস পড়ে। তাতে আবার লোকে আনন্দও পায়। মানুষ মানুষকে মৃত্যুভয় দেখাবে, মারবে, আতঙ্কিত করবে, বিভিন্ন রকম চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষ মানুষকে ঠকাবে এই সব এখন পেশা হয়ে গেল, যা ভাবা যায় না। মানবসভ্যতা কিন্তু করোনা ভাইরাসে শেষ হবে না, শেষ হবে ‘মানুষ’ নামক ভাইরাসে। কেউ আটকানোর নেই।
বঙ্গভূমি লাইভ: আমরাই তো সেই প্র্যাঙ্ক বা ভিডিওকে ভাইরাল করছি। আমাদেরও তো কোনও দায় থাকে...
কৌশিক: আমার শুধু এটুকু মনে হয় যাঁরা এই নেটমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের বোঝা উচিত, এই মাধ্যম পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম। এই মাধ্যমের দ্বারা সভ্যতার মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আবার সভ্যতাকে ধ্বংসও করে দেওয়া যেতে পারে। যারা হ্যাক করে, তারা তো সাংঘাতিক বুদ্ধিমান টেকনিশিয়ান। তারা স্কলার, পণ্ডিত, কম্পিউটারের সমস্ত লক্ষণরেখাকে ভেঙে পেরিয়ে গেছে। মাঝরাতে ব্যাঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করছে, বিভিন্ন রকম ভাবে চুরি করছে। আফসোস তখনই হয় যখন দেখি এই বুদ্ধিমানরাই মানুষের ক্ষতি করছে। এখন চুরির চেহারাটা কর্পোরেটের মতো হয়ে গেছে। যাকে আটকানোর কেউ নেই। সমস্তকিছুই আস্তে আস্তে মানুষের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। খুব চিন্তা হয়, মনে হয় আর কবে ভাববে মানুষ। আমি খুব নিরাশ হয়ে যে এই কথাগুলো বলছি তা নয়, শুধু ভীষণ ভয় লাগছে এখন। নেটিজেন কথাটার যে গৌরব, সেই গৌরবটা নষ্ট করে দিচ্ছে এই নেটিজেনরাই।

আমাকে মাথায় রাখতে হবে, ফেসবুক (Facebook) বা ইনস্টাগ্রামে (Instagram) আমি এমন ছবি দেবো যা দেখে আর পাঁচটা মানুষ যেন অনুপ্রাণিত হয়। আমি যখন বিবাহবার্ষিকীর একটা ছবি দিই, আমি এই বুঝে দিই যে আমাদের এতবছরের বন্ধুত্ব বা বিবাহিত জীবন যেন অন্যদের দু’বার ভাবতে সাহায্য করে। কারণ এখন অনেকেই ভাল থাকার জন্য আলাদা হয়ে যায়, আবার অনেকে দাদু-দিদিমার পঞ্চাশ বছরের বিবাহিত জীবন উদযাপন করে। আমার তখন মনে হয়, ওঁদের মতো পারব পঞ্চাশ বছরের বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করতে!
এই যে নিজের আনন্দকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে জীবন সম্পর্কে সচেতন করা, এসব না করে খালি হতাশা হতাশা আর হতাশা।
এখন সিনেমা বানালে যদি দেখানো হয়, একটি ছেলে একটি মেয়েকে ভালবাসে। বিয়ে করে সুখে ঘর করছে, দর্শক এসব দেখবে না। সুপারফ্লপ হয়ে যাবে ছবি। অন্যদিকে বিয়ের রাতে যদি বউ জানলা ভেঙে পালিয়ে যায়, ওমনি লোকে ছবি দেখতে শুরু করবে। হাততালি দেবে।
প্রতিবেশী সুখে থাকলে, কেউ জানলায় এসে উঁকি মারে না। যখনই ঝামেলা করে, এসে উঁকি মেরে দেখে। এই যে উঁকি মারা নেটিজেন, তাদের সচেতন হতে হবে।
শেষে আমি এটুকুই বলব, নেটিজেন কথাটার মধ্যে যে গৌরব বা সমাজের প্রতি তাদের যে বড়ো দায়িত্ব রয়েছে সেটা বোঝার জন্য অনুরোধ করছি। এর বেশি আমি কীই বা চাইতে পারি, করতে পারি?
Leave a Reply