বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: দেশে আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে কোভিড সংক্রমণ। পাশাপাশি দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে ওমিক্রন। দেশের রাজধানী দিল্লি এবং বাণিজ্যনগরী মুম্বই ইতিমধ্যেই ওমিক্রনের দাপটে কাবু। এর পাশাপাশি খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয় কলকাতার কোভিড পরিস্থিতি বা ওমিক্রন সংক্রমণও। দেশের যে ১৪টি শহরে কোভিড সংক্রমণ আচমকা মাথাচা়ড়া দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে কলকাতাও। যা চিন্তায় রেখেছে কেন্দ্রকে। ওমিক্রন যাতে কোনওভাবে মারণ রূপ না ধরে, তারজন্য অবিলম্বে সতর্ক হতে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র। দিল্লির চিঠি এসেছে নবান্নেও।
গত দু’সপ্তাহে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্যকে এবার চিঠি দিল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ চিঠি পাঠিয়ে সংক্রমণ রোধে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের উপর নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। কোভিডের তৃতীয় ঢেউকে প্রতিরোধ করতে নমুনা পরীক্ষায় এতটুকু শিথিলতা যাতে না থাকে, তাও নিশ্চিত করার দায়িত্ব যে রাজ্য সরকারেরই তা স্বাস্থ্য সচিবের চিঠিতে স্মরণ করানো হয়েছে।
বিদেশ ফেরত যাত্রীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিক্যুয়েন্সিং এর জন্য পাঠানোর কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। বিশেষ করে কলকাতা জেলায় সংক্রমন লাফিয়ে বেড়েছে গত দুই সপ্তাহে। সংক্রমণে লাগাম টানতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে চিঠিতে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণের পরামর্শ, করোনা পরীক্ষা বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশনে পাঠাতে হবে।বিশেষ করে কলকাতার জন্য নিতে হবে বিশেষ সতর্কতা।
দিল্লি ও মুম্বইতো আছেই। করোনা চোখ রাঙাতে শুরু করেছে কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু মেট্রো সহ আহমেদাবাদের মতো বড় বা গুরগাঁওয়ের মতো ছোট শহরেও। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে দিল্লিতে করোনার সংক্রমণ ২৪ ঘণ্টায় ৮৬ শতাংশ এবং মু্ম্বইয়ে ৮২ শতাংশ বেড়েছে। কলকাতায় ১,৪৯৪ থেকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২,৬৩৬ হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে হয়েছে ১,৪৪৫ থেকে ১,৯০২। দিল্লি লাগোয়া হরিয়ানার গুরগাঁওয়ে একসপ্তাহে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৪ থেকে একলাফে পৌঁছে গেছে ৭৩৮-এ।
বর্ষশেষের উৎসবে ভাটা পড়বে জেনেও, একের পর এক রাজ্য সংক্রমণ ঠেকাতে নাইট কার্ফু জারি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তা করোনার ডেল্টা রূপের কারণেই। এর সঙ্গে ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়ালে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হবে। তাঁদের মতে, অবিলম্বে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ না করলে পরিস্থিতি আবার কয়েকমাস আগের মতো ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াবে।
সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউযের আগে সংক্রমণ প্রতিরোধে দিল্লি যেভাবে চারস্তরীয় গ্রে্ডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে এগোচ্ছে, অন্য রাজ্যগুলিরও তা অনুসরণ করা উচিত বলে মত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সংস্থার।
কোভিড প্রতিরোধকারী এই পরিকল্পনা অনুযাযী, অতিমারীর দ্বিতীয় পর্বের পর, ধীরে ধীরে এবং পর্যায়ক্রমে নাগরিক জীবন স্বাভাবিক করা হয়। প্রথমে শপিং মল, রেস্তরাঁ, দোকানবাজার, সিনেমা হল,স্পা, জিম বন্ধ রাখা হয়। একইসঙ্গে বন্ধ করা হয় স্কুল-কলেজ সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অফিসে ৫০ শতাংশ কর্মীর উপস্থিতিতে কাজের সময় বেঁধে দেওয়া হয় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। কিন্তু সংক্রমণ কমতে থাকায় সবকিছুই পুরনো ছন্দে ফিরে খুলতে শুরু করে। কিন্তু ২০২১-এর বিদায় লগ্নে আবার করোনার দাপট যেভাবে বেড়েছে, তাতে আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে পুরনো কোভিড বিধিও।
Leave a Reply