বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের আঁচ এবার এসে পড়ল সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রকাশ্যে এল হিটলারের সঙ্গে পুতিনের কার্টুন। আর এই নিয়ে মজেছে বিশ্ব।রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia Ukraine War) নিয়ে এবার সোশ্যাল মিডিয়াতেও (Social Media) সরব হল ইউক্রেন (Ukraine)। ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যে আগ্রাসন নীতি চালাচ্ছে, তাতে ক্রমেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। রাশিয়ার নাগরিকরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। অনেকেই এই যুদ্ধের জন্য পুতিনকে দোষারোপ করতেও ছাড়ছেন না। পুতিনের এই হিটলার তকমাকে ব্যঙ্গ করে একটি কার্টুন চিত্র বানিয়েছে ইউক্রেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল ইউক্রেনের তৈরি এই পোস্ট।
পোস্টে শুধু ছবিটা দিয়েছে ইউক্রেন। পোস্টের সঙ্গে কোনও লেখা নেই। কার্টুনে দেখা যাচ্ছে, পুতিন ও হিটলার একে অপরের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। হিটলার পুতিনের গালে হাত রেখেছেন। এই কার্টুন এক ঝলক দেখলে মনে হবে, পুতিনের কাজে ভীষণ খুশি হয়েই তাঁকে যেন ছুঁয়ে দেখতে চাইছেন হিটলার। অনেকেই হয়তো ভাববেন যে, ইউক্রেন একটি মিম বানিয়েছে। কিন্তু বিষয়টা তা নয়। কার্টুনের সঙ্গে কোনও লেখা বা টেক্সট না থাকলেও, ওই পোস্টের তলায় একটি রিটুইট করা হয়। সেই রিটুইটে লেখা ছিল, এটি কোনও মিম নয়। এটি এখন বাস্তব। অর্থাৎ হিটলারের নিষ্ঠুরতার সঙ্গে পুতিনের তুলনা টানতেই এই পোস্ট। রাশিয়া থেকেও টুইট করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সেখানকার নাগরিকরা। পুতিনের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েও রাস্তায় নেমেছেন অনেক রাশিয়াবাসী। নিজেকে রাশিয়ান বলতেও লজ্জা পাচ্ছেন বহু নাগরিক। তাই ইউক্রেনের পাশে থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার দু’দিনের মধ্যে ইউক্রেনে সাধারণ নাগরিক এবং সৈন্য মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩৭ জনের। এক লক্ষেরও বেশি ইউক্রেনবাসী ঘরছাড়া। ইউক্রেন ছেড়ে বহু মানুষ চলে যাচ্ছেন পোল্যান্ডে।
এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, কেন হিটলারের সঙ্গে পুতিনের তুলনা সামনে এল? একমাত্র কারণ নৃশংসতা। অ্যাডফ হিটলার। জার্মানির নাৎজি দলের সুপ্রিম। দুনিয়ার নৃশংস শাসকের তালিকায় ইনিই ‘ফাস্ট বয়’। চূড়ান্ত শৃঙ্খলা আর আপাদ মস্তক ফ্যাসিস্ট চরিত্রের একজন শাসক, ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল আত্মহত্যা করেছিলেন অ্যাডফ হিটলার। অবশ্য তাঁর মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। একদল মনে করেন তিনি আত্মহত্যা করেননি, পালিয়েছিলেন। আর রাশিয়ার একদল কমিউনিস্টদের ব্যাখ্যা নিজের বাসগৃহেই আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি এবং তাঁর একনিষ্ঠ কর্মীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর দেহ জ্বালিয়ে দিতে। রাশিয়ার (Russia) ইউক্রেন (Ukraine) দখল কার্যত সময়ের অপেক্ষা, কিয়েভেও (Kyiv) ঢুকল ট্যাঙ্ক। এদিকে, এই পরিস্থিতিতে আলোচনার জন্য তৈরি ইউক্রেন, দাবি রুশ সংবাদসংস্থার। অন্যদিকে রাশিয়ার তরফে সাফ জানান হয়েছে যে আত্মসমর্পণ করলে বন্ধ হবে যুদ্ধ। এই আবহে আলোচনার জন্য পুতিনের কাছে বার্তা ইউক্রেনের। এই পরিস্থিতিতে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকল রুশ সেনা। বেলারুশের দিক থেকে কিয়েভে রুশ সেনা ঢুকেছে বলে খবর। তুমুল সংঘর্ষ চলছে বিভিন্ন জায়গায়। সেইসঙ্গে চলছে রাশিয়ার বিমানহানাও। কিয়েভের আকাশে ধ্বংস হয়েছে ইউক্রেনের বিমান। ইউক্রেন সরকার স্বীকার করেছে, এখনও পর্যন্ত যুদ্ধে তাদের দেশের জওয়ান সহ ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩৬০ জন। পাল্টা হামলায় ৮০০ জন রুশ সেনাকে মারতে সক্ষম হয়েছে তারা, দাবি ইউক্রেনের।
অন্যদিকে, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি হয়ে ইউক্রেনে আটক ভারতীয়দের উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। রোমানিয়া, হাঙ্গেরি সীমান্তের চেক পোস্টে ভারতীয় কূটনীতিকরা রয়েছেন। রুশ হামলার মুখে ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারে তৎপরতার সঙ্গে চলছে কাজ। আটকে পড়া ভারতীয়দের রোমানিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তের দিকে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গাড়িতে ভারতীয় পতাকা লাগিয়ে সীমান্তের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফেরানোই এখন চিন্তা নয়াদিল্লির। সূত্রের খবর, যেহেতু ইউক্রেনে আসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ, তাই সড়কপথে প্রতিবেশী দেশগুলিতে ভারতীয়দের নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, এই চারটি দেশে ভারতীয়দের সড়কপথে নিয়ে এসে সেখান থেকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে রোমানিয়ার বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এস জয়শঙ্কর।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন যে, তারা ইউক্রেনের বিমান ঘাঁটি ও তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিবেশী দেশে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেওয়ার পরই দ্রুতগতিতে হামলা চালায় রুশ বাহিনী। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউক্রেন সেনার বিমান ঘাঁটির পরিকাঠামো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। ধ্বস্ত করে দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশের পর অভিযান শুরু করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এরপর সমগ্র ইউক্রেন জুড়েই শোনা গিয়েছে বিস্ফোরণের শব্দ। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, পুরোদস্তর অভিযান শুরু হয়েছে। যুদ্ধ যখন নিন্দা, সারা বিশ্ব যখন নিন্দায় মুখর, তখন প্রাসঙ্গিকভাবেই সামনে এল হিটলারের সঙ্গে পুতিনের তুলনা।
Leave a Reply