বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলে তার পেছনে থাকে একটা লড়াইয়ের গল্প। এমনই এক সফল চরিত্রের নাম অনিশা তোমার। আজ এক সফল আইএফএস অফিসারের নাম অনিশা। কিন্তু তাঁর এই সাফল্য একবারে আসেনি। পেরোতে হয়েছে অনেক ঝড় ঝাপটা। ইউপিএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছে তাঁর চড়াই উতরাইয়ের গল্প উদ্দীপক হিসেবে কাজ করতে পারে। আইএফএস অফিসার হতে তিনবারে পরীক্ষার স্তর পেরিয়েছেন অনিশা। ২০১৯ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া র্যাঙ্কে ৯৪ স্থান পান।অনিশা নিজেই জানান, তাঁর সাফল্য় ব্যর্থতার কথা। অনিশা প্রথমে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। প্রথমেই তিনি বুঝতে পারেন, এই পথ পেরানো সহজ হবে না। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। প্রিলিমের দরজা পেরানোর পর লড়াই যে আরও কঠিন, তা বুঝতে পারেন। ২০১৮ সালে তাঁর ধরা পড়ে এক কঠিন রোগ। যার নাম ইডিওপ্যাথিক ইন্ট্রাক্রানিয়াল হাইপারটেনশন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর এই রোগ ধরা পড়ে।দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার লড়াই চলছে তখন। এরপরে লড়াই আরও কঠিন হয়ে যায়। হাল ছাড়েননি অনিশা। শরীর সঙ্গে দেয়নি। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে তিনি প্রিলিম ক্লিয়ার করেন। কিন্তু ৬টা নম্বরের জন্য আটকে যান মেইনে।
এরপরেও তিনি হাল ছাড়েননি। আরও কঠিন লড়াইয়ের জন্য তৈরি হন। এরপর তৃতীয়বারও তিনি সহজে প্রিলিম ক্লিয়ার করেন। মেইনের জন্য এবার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। আরও বেশি করে সময় দেন মেইনের জন্য। এবারও প্রিলিম ক্লিয়ার করার পর মেইনে বসেন। তারপর ডাক পেলেন ইন্টারভিউয়ে। নতুন করে তৈরি হতে থাকলেন। যাতে এবার আর হাত থেকে সুযোগ ফস্কে না যায়। তার জন্য দিন রাত এক করে চেষ্টা করেন তিনি। পরিস্থিতি তাঁর অনুকূলে ছিল এবার অন্তত। তাই সফল হল তাঁর চেষ্টা। তবে সাফল্যের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তাঁকে আরও অনেকগুলো দিন অপেক্ষা করতে হল। পরীক্ষার ফল বেরোতে দেরি হওয়ায় তিনি অধৈর্য হয়ে পড়েন। কিন্তু কী করবেন! এতো তাঁর হাতের বাইরে। অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। একরাশ উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা পেরিয়ে এল সাফল্য। এল ইন্ডিয়া র্যাঙ্ক ৯৪। আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হল না। এবার শুধুই চড়াই।এই সাফল্য যখন তাঁকে এসে ধরা দিল, তখন আর চোখের জল আটকে রাখতে পারছেন না তিনি। অনিশা নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে পোস্ট করেন, তাতে তিনি লেখেন, জীবনের অর্থ সহজে বোঝার নয়। আশা রেখে যেতে হয়। অর্থাৎ হাল ছেড়ো না বন্ধু!এই শব্দগুলো আগামীর পরীক্ষার্থীদের যে প্রেরণা দেবে তা বলাই বাহুল্য। জীবনের লড়াই কঠিন, কিন্তু তাতে ভেঙে পড়তে হয় না। অনিশা তাঁর জীবন থেকে এই পাঠ নিয়েছেন। এবং আগামীর জন্য তা বিলিয়েছেন।
ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে যোগ দিতে হলে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরিচালিত সিভিস সার্ভিসেস পরীক্ষায় বসতে হয়। তার পরে সেখানে র্যা ঙ্ক অনুযায়ী ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস পদে যোগ দেওয়ার সুযোগ মেলে। এ বছর পর্যন্ত পরীক্ষার যা ধরন, তাতে থাকে তিনটে ধাপ —প্রিলিমিনারি, মেইন এবং পার্সোনালিটি টেস্ট। প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটা হয় অবজেকটিভ ধরনের। এটাকে এক ধরনের স্ক্রিনিং টেস্ট বলা যায়। এই ধাপ যারা পেরোয়, তারা বসতে পারে মেন পরীক্ষায়। মেইন পরীক্ষা হল লিখিত পরীক্ষা। এতে উত্তীর্ণ হলে প্রার্থীরা ডাক পায় পার্সোনালিটি টেস্ট-এ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২টো পেপার। এক, জেনারেল স্টাডিজ (জিএস)। আর, দুই, সিভিল সার্ভিসেস অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট (সিস্যাট)। প্রত্যেকটি পেপারের জন্য সময় দু’ঘণ্টা, মোট ২০০ নম্বর করে। এখানে নেগেটিভ মার্কিং আছে।ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা করে যা UPSC সিভিল সার্ভিস (CIVIL SERVICE) নামে পরিচিত। অনেক প্রার্থীই আইএএস (IAS), আইপিএস (IPS) এবং আইএফএস (IFS) – এর জন্য কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন তা নিয়ে বিভ্রান্ত হন। একথা ঠিক নয় যে কেবলমাত্র একক প্রচষ্টাতেই এই কঠিন পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়া যায়, তবে হ্যাঁ বহু মানুষই নিজেই শৃঙ্খলাপরায়ণ পদ্ধতিতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এমন উদাহরণও কিন্তু রয়েছে। ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে বছরে এক বার আইএএস, আইপিএস এবং আইএফএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ ভাবে ২১ থেকে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সংরক্ষিত বর্গের প্রার্থীদের বয়সের উর্ধবসীমায় ছাড় দেওয়া হয়েছে।শুধুমাত্র এই পরীক্ষাই যে কঠিন পথ, তা নয়, জীবনের যেকোনও লড়াই কঠিন, তার জন্য দরকার স্থির থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
Leave a Reply