বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: একেই বোধহয় বলে ঠেলার নাম বাবাজি! কারণ হুন্ডাই বিতর্কের পর সামনে আসে আরও কয়েকটি বড় ব্র্যান্ড। ভারতীয়দের আবেগকে আঘাত করার অভিযোগ ওঠে। তারপরে বয়কটের ডাক। এরপর চাপের কাছে মাথা নত করে ক্ষমা চাওয়া।দিন কয়েক ধরেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ঝড়। হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং #boycottkfc। তারপরই #boycotthyundai। কী এমন করল এই দুই সংস্থা ? সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ঝড় উঠল যে ধাক্কা সামলাতে ক্ষমা চাইল দুই সংস্থা। টুইট করে কেএফসিকে লিখতে হল, আমরা ভারতকে সম্মান করি! কেন উঠল অসম্মানের প্রশ্ন ?
৫ ফেব্রুয়ারি ‘কাশ্মীর সংহতি দিবস’ পালন করে পাকিস্তান। সেইদিনই কেএফসির পাক-শাখা তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে পাকিস্তানের তরফে কাশ্মীরিদের প্রতি বলে হয়, তুমি কখনও আমাদের ভাবনা ছেড়ে যাওনি! সেই পোস্টে আবার লাল রং দিয়ে লেখা ছিল, কাশ্মীর, কাশ্মীরিদের জন্য। অর্থাৎ তা প্রত্যক্ষভাবে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করা, যা ভারতবিরোধী।সেই পোস্টই কেএফসি পাকিস্তানের ফেসবুক পেজ থেকে ভাইরাল হয়ে যায় স্ক্রিনশট করে। তা নিয়েই বিতর্কের ঝড় ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে একের পর এক কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার পাকিস্তানি শাখাগুলির তরফে। আর তার জেরে ভারতে ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে সংস্থাগুলিতে।এই তালিকায় প্রথমে রয়েছে হুন্ডাই।আর এবার ফাস্ট-ফুড চেন কেএফসি। কেএফসি-কে বয়কটের ডাক দিয়েছে বহু ভারতীয়।আর সেই ক্ষোভের মুখে পড়ে এবার টুইটারে ক্ষমা চাইল কেএফসি ইন্ডিয়া।তাদের তরফে জানানো হয়েছে, ‘দেশের বাইরে কেএফসি-র কিছু সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে যে পোস্ট করা হয়েছে তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী’।
ঠিক কী পোস্ট করা হয়েছিল কেএফসি পাকিস্তানের তরফে? কেএফসি পাকিস্তানের ফেসবুক পেজে কাশ্মীরের সঙ্গে ‘সংহতি’ চিত্রিত একটি পোস্ট আপলোড করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি ওই পোস্ট করা হয়েছিল। সেই পোস্টে লেখা হয়, তুমি কখনও আমাদের চিন্তাভাবনা ছেড়ে যাওনি।আর আমরা আশা করি যে আগামী বছরগুলি তোমার জন্য শান্তি নিয়ে আসবে।আর সেই পোস্টের সঙ্গে বড় বড় করে লাল রঙ দিয়ে লেখা হয়েছিল ‘কাশ্মীর, কাশ্মীরিদের জন্য’।এই পোস্ট ছড়িয়ে পড়ার পরই শুরু হয় বিতর্ক।প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রকাশে পাকিস্তানে ৫ ফেব্রুয়ারি ‘কাশ্মীর সংহতি দিবস’ পালন করা হয়।ওই দিনই এই পোস্ট করেছিল তারা।
কেএফসি পাকিস্তানের তরফে ওই পোস্ট করার পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। আর তার প্রভাব পড়ে কেএফসি ভারতের উপর। যদিও তারপরই সেই পোস্ট সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়েই যায়। সেই পোস্টের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর সেই স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে শুরু করেন নেটিজেনরা। পাশাপাশি কেএফসিকে বয়কটের ডাকও দেন তাঁরা।
কেএফসিকে ভারতে বয়কটের ডাক দেওয়ার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করা হয় কেএফসি ভারতের তরফে। সেখানে সমগ্র দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় ভারতে অবস্থিত এই ফাস্ট-ফুড চেনটি। টুইটারে তাদের তরফে লেখা হয়, দেশের বাইরে কেএফসির কিছু সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে প্রকাশিত হওয়া পোস্টের জন্য আমরা গভীরভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।আমরা ভারতে সম্মান করি।এবং গর্বের সঙ্গে সব ভারতীয়কে সেবা করার জন্য আমরা আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকব।একইভাবে হুন্ডাই পাকিস্তানের তরফেও এই ধরনের পোস্ট করা হয়েছিল। তারপরই হুন্ডাই ভারতের তরফে কড়া বিবৃতি দেওয়া হয়। বলা হয়, ভারতের জাতীয়তাকে সম্মান করার দৃঢ় নীতি রয়েছে তাদের। হুন্ডাই মোটর ইন্ডিয়া’কে সংযুক্ত করা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলি ‘অযাচিত’। ভারতের প্রতি গুন্ডাই ইন্ডিয়ার যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে এবং তারা যে পরিষেবা দিয়ে আসছে – এই ধরণের সোশ্য়াল মিডিয়া পোস্ট তাকে আঘাত করছে। ভারতকে, হুন্ডাই ব্র্যান্ডের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এই বিবৃতিতে।এই ধরণের অসংবেদনশীল পোস্টের বিষয়ে তাদের শূন্য সহনশীলতার নীতি রয়েছে এবং তারা এই ধরনের যে কোন দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র নিন্দা করে বলে দাবি করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।পিৎজা হাটও একটি বিবৃতিতে লেখে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ওই পোস্টের বিষয়বস্তুকে তারা সমর্থন করে না, সম্মত হয় না। আমরা আমাদের সব ভাই-বোনদের গর্বের সঙ্গে পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর। ভারতীয়দের আবেগ নিয়ে খেলার অর্থ যে ভালো হবে না, তা ভারতীয়রা ভালোই বুঝিয়ে দিয়েছেন বড় ব্র্যান্ডগুলিকে।তাই শেষপর্যন্ত তাদের ভারতীয়দের আবেগের কাছে মাথা নত করতেই হল।এখানেই ভারতের জয়। বিচ্ছিন্নতার কাছে মাথা নোয়ায় না ভারত।
Leave a Reply