বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: অসমের বাসিন্দা, এনআরসি তালিকায় নামও ছিল। তাঁর নামে ছিল বৈধ জমিজমাও। তা সত্বেও নিজভূমেই পরবাসী হয়ে গেলেন। একদিন হঠাৎ বিদেশি নোটিস পেয়ে মাথায় আকাস ভেঙে পড়ে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের আয় যৎ সামান্য, তার চেয়েও কম সামর্থ্য। তবুও নিজেকে ভারতেরই একজন নাগরিক প্রমাণ করতে সর্বস্ব খুইয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পেরে ওঠেননি। এরপর তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় বেছে নিলেন চরম পথ, আত্মহত্যা করলেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ মানিক দাস।
তিন বছর ধরে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আইনি লড়াই চলছিল। নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারেননি অসমের মরিগাঁও জেলার বোরখাল গ্রামের এই বৃদ্ধ। জাগি রোড বাজারে মানিক দাসের ছিল বহু পুরনো শুঁটকি মাছের ব্যবসা।
২০১৯ সালে এনআরসি থেকে নাম বাদ যাওয়ার পর ওই বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে আইনি লড়াই শুরু করেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে শুনানি চলছিল তাঁর মামলার। তাঁর পরিবারের দাবি, ‘বাংলাদেশি’ পরিচয় মানতে পারেননি তিনি। চরম অবসাদ ও তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন। যত দিন যায় তা আরও বাড়তে থাকে। তাঁর ছেলে কার্তিক দাস এনআরসি তৈরির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। সংবাদ মাধ্যমকে কার্তিক জানিয়েছেন, ‘বাবা এবং আমাদের পরিবারের সকলের নামই এনআরসিতে ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাবা একটি নোটিস পান, যে তাঁকে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। অসমের এনআরসি তালিকায় নাম থাকা মানুষদের যদি বিদেশি বা বাংলাদেশি বলেই চিহ্নিত করা হয়, তবে এনআরসি করার এর অর্থ কী?’
পেশায় ছুতোর মিস্ত্রি ৩৫ বছরের কার্তিক বলে চলেন, ‘আমার বাবা প্রত্যেক শুনানিতে হাজিরা দিতেন। কিন্তু আইনি লড়াই চালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তার উপর অর্থের জোগানও ছিল না। শুঁটকি মাছ বিক্রি করে তেমন রোজগার হত না। সংসার চালানো দায় ছিল। আমাদের পরিবার সর্বস্ব খুইয়েছে।’
মানিক দাসের আইনজীবী দীপক বিশ্বাস বলেছেন, ‘আমার মক্কেলের পরিচয়পত্র-সহ সব জরুরি কাগজপত্র ছিল। প্যান কার্ড, আধার কার্ড, জমির দলিল সব। কিছু কাগজপত্রে তাঁর মায়ের নামও সংযুক্ত ছিল। শুনানিতে নিয়ম করে হাজিরা দিতেন। মাস খানেক আগে শুনানি ছিল। ট্রাইব্যুনালে নিজের উত্তর জানিয়েছিলেন আমার মক্কেল। এর পর সাক্ষী পেশ করার কথা ছিল পরের শুনানিতে।’ মানিক দাসের আইনজীবীর আশা, এরপর নিশ্চয়ই ট্রাইব্যুনালে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারতেন মানিক দাস।
সংবাদসংস্থা জানাচ্ছে, গত রবিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন ওই বৃদ্ধ। মঙ্গলবার সন্ধেয় বাড়ির কাছেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। এ ব্যাপারে মরিগাঁওয়ের এসপি অপর্ণা নটরাজন জানিয়েছেন, মানিক দাসের পরিবারের তরফে ৩০ জানুয়ারি জাগি রোড থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। ৩১ তারিখ বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত চলছে।
Leave a Reply