বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: দ্রুত উষ্ণায়নের ভয়াবহ বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্ব। কার্বন নিঃসরনের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন থেকে তাবড় তাবড় রাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও, উষ্ণায়নের মাত্রা কমানো যায়নি।
পৃথিবীর বাতাসে যত কার্বন ডাই অক্সাইড মিশে যাচ্ছে তার অধিকাংশই আসছে চারটি দেশ অর্থাৎ আমেরিকা, রাশিয়া, চীন ও ভারত থেকে। এরপরেই রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। প্যারিসে ২০১৫ সালের সম্মেলনে এই সব রাষ্ট্র একমত হয়েছিল যে, বিশ্বের তাপমাত্রার বিপজ্জনক বৃদ্ধি ঠেকাতে কার্বন নিঃসরণ কমাবে। যে প্রতিশ্রুতি রাখা তো সম্ভবই হয়নি। বরং অভিশাপের মতো এসে দাঁড়িয়েছে নতুন বিপদ। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, যেহেতু ভারত শ্রমনিবিড় একটি দেশ, সেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাপমাত্রার বৃদ্ধি আমাদের শ্রমশক্তির উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আগামীদিনে যদি বিশ্বের তাপমাত্রা গড়ে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তার ফলস্বরূপ প্রতিবছর ভারতেই ১০ হাজার কোটিরও বেশি শ্রমঘণ্টা নষ্ট হতে চলেছে।
বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে, তাপমাত্রা বাড়তে থাকার দরুন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গত দু’দশকে, বছরে ২২৮ বিলিয়ন(১ বিলিয়ন =১০০ কোটি)শ্রম ঘণ্টা বিফলে গেছে। যার মধ্যে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিক্ষেত্র। ২০১৬ সালে ২২০ বিলিয়ন এবং ২০১৯ সালে ২১৭ বিলিয়ন শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়েছে।
সম্প্রতি ‘গ্লোবাল লেবার লস’ শীর্ষক একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে বাতাসের অত্যধিক আর্দ্রতা যুক্ত হয়ে আবহাওয়াকে ঘরের বাইরে কায়িক পরিশ্রমের পুরোপুরি অনুপযুক্ত করে তুলেছে। উন্মুক্ত পরিবেশে শ্রমিকের সংখ্যা এবং তাদের বয়সের অনুপাত ধরে দেখা গেছে, দক্ষিণ, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শ্রমঘণ্টা নষ্টের পরিমাণ সর্বাধিক। কারণ এই অঞ্চলেই সর্বাধিক মানুষ কৃষি শ্রমিক বা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। ফলে তাঁদের কাজের পুরো সময়টাই চড়া রোদের মধ্যে থাকতে হয়। শীতকাল বাদে বছরের অন্য সময়ে মাটিতে মেশে তাদের কালঘাম।
জাতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে নেচার কম্যুনিকেশনস শীর্ষক একটি সমীক্ষাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে অতিরিক্ত গরমের জন্য ভারতে ১০০ বিলিয়ন শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে সময় অপচয়ের পরিমাণ বেড়ে ২৫৯ বিলিয়ন ঘণ্টা পর্যন্ত চলে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
অন্যদিকে ভারতের মতোই জনবহুল দেশ চীনে কিন্তু শ্রম ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে সর্বনিম্ন ২১ এবং সর্বাধিক ৭২ বিলিয়ন ঘণ্টা। এর কারণ চীন ধীরে ধীরে, কৃষি বা কারখানার মতো শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রগুলির সংস্কার ঘটিয়ে, শ্রমিক নির্ভরতা কাটিয়ে উঠছে।
ভারত ছাড়া অন্য যে সকল রাষ্ট্র একইরকম ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে, সেগুলি হল বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সুদান। তবে ভীযণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কাতার, বাহরিন এবং সংযুক্ত আরব আমীরশাহি। সমীক্ষা দেখিয়েছে, বিশ্বজুড়েই স্যাঁতস্যাঁতে গরম মাঠেঘাটে কাজ করা মানুষের স্বাস্থ্যকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করছে।
শ্রমঘণ্টা নষ্ট হওয়ার প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ে জাতীয় অর্থনীতির উপর। ২০১৭ সালে শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের দরুণ আর্থিক লোকসানের পরিমাণ ছিল ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার।
এদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৩৩ থেকে ৩৫ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ভারত। এই পদক্ষেপ হিসেবে, কয়লার মতো ফসিলজাত জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে ভারত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারে জোর দিয়েছে। তবে ভারতের যুক্তি বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে অপেক্ষাকৃত ধনী এবং অধিক শিল্পোন্নত দেশগুলিকেই কার্বন নির্গমন কমানোর দায়িত্ব বেশি করে নিতে হবে। কারণ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সব ধনী দেশের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি।
Leave a Reply