বঙ্গভূমি লাইভ ডেস্ক: গার্হস্থ্য হিংসা আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ বহুদিনের। এবার সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিল এই আইনকে হাতিয়ার করে অনেক সময় পান থেকে চুন খসলে স্বামী ও তাঁর পরিবারকে হেনস্থা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এক মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৮৯এ- এই আইন মেয়েদের সুরক্ষাকবজ। এই আইন স্বামী ও তাঁর পরিবারের হিংসার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার কথা। কিন্তু অনেক সময় তা ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। এরকম অভিযোগ আগেও এসেছে সুপ্রিম কোর্টের কাছে।
মামলা
——–
এক মহিলা স্বামী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন। তাঁর অভিযোগ, পণের জন্য তাঁর ওপর অত্যাচার করা হয়। এমনকী তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে মেরে ফেলার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এই মামলার রায় দিতে গিয়ে আদালত বলে, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ নেই মেয়েটির পক্ষে। তাই এফআইআর বাতিল করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের উদ্বেগ
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এস আবদুল নাজিরের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ বলেছে, সাধারণ এবং বিক্ষিপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামীর আত্মীয় অর্থাৎ মহিলার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা হলে সেটা হবে আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহারের সমান।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, পণের দাবিতে হয়রানি রোধের বিধি অর্থাৎ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারা আজকাল স্বামীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে একটা বড় হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমন একটি ফৌজদারি মামলা যাতে খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, তবুও ভবিষ্যতে এটা অভিযুক্তদের জন্য একটি গুরুতর দাগ রেখে যায়। ফলে এই ধারা ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত অভিযোগ থাকা জরুরি।
মামলার নেপথ্যে
স্বামী এবং তাঁর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে পণের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন ওই মহিলা। এফআইআর বাতিল এবং আইনি পদক্ষেপের জন্য পটনা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযুক্তরা। হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে দেয়। এর পর একই আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যান তাঁরা।
অন্য দিকে, মহিলার অভিযোগ, তাঁকে নির্যাতনের জন্যই তিনি মামলা করেছিলেন। যৌতুকের জন্য তাঁকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তবে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, স্বামীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে সাধারণ এবং বিক্ষিপ্ত অভিযোগ বাতিল করা উচিত কি না, সেটাই।
কী বলল সুপ্রিম কোর্ট
তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্তে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, পণের দাবিতে মহিলাদের উপর নির্যাতন রোধের জন্য আইন করা হয়েছে। কিন্তু এটাও সত্য যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দাম্পত্য বিরোধ উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। সে সবের সহজ সমাধানে পৌঁছোতে এই আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনাও ঘটছে।পুরো বিষয়টিকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সর্বোচ্চ আদালত। বলেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বামীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে এ ধরনের আইনের অপব্যবহার হয়। সাধারণ এবং বিক্ষিপ্ত অভিযোগ যাচাই না করা হলে আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার হতে পারে। স্বামীর আত্মীয়ের বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রমাণ না থাকলে, শুরুতেই এ ধরনের মামলা চালানোর বিরুদ্ধে আদালতকে সতর্ক করেছে সুপ্রিম কোর্ট।এই মামলাটির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, স্বামী কোনো আবেদন করেননি। তবে শ্বশুরবাড়ির অন্য লোকজন আবেদন করেছেন। যেখানে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ ভূমিকা নির্ধারিত নেই, সেখানে মামলা শুরু করা যায় না।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারায় বিবাহিত কোনও মহিলা শ্বশুরবাড়িতে নিষ্ঠুরতার শিকার হলে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে নিষ্ঠুর আচরণের সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে, এমন কোনও আক্রমণাত্মক আচরণ যা ওই বিবাহিত মহিলাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয় অথবা তাঁর দেহে অথবা মনে মারাত্মক আঘাত সৃষ্টি করে। এছাড়া এই আচরণের আওতায় পড়ে মূল্যবান সম্পত্তি বা সামগ্রীর জন্য বধূ বা তাঁর কোনও আত্মীয়কে চাপ দেওয়ার মতো ঘটনাও। শ্বশুরবাড়ির দাবি অনুযায়ী, এই সব মূল্যবান সম্পত্তি বা সামগ্রী জোগাড় করতে অপারগ হলে বধূ বা তাঁর আত্মীয়দের প্রতি হেনস্থাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আদালতে অভিহিত হয়।যদিও এমন গুরুত্বপূর্ণ আইনের অপব্যবহারের অভিযোগও বিস্তর পাওয়া গিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে বলে, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে মহিলাদের বিবাহ পরবর্তী নিষ্ঠুরতা থেকে সুরক্ষা দিতে ৪৯৮ এ ধারা রাখা হয়েছিল। কিন্তু অন্য পক্ষকে হেনস্থা করতে যে ভাবে তাকে হাতিয়ার করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। আবার এই আইনের অপব্যবহার করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল দেশের শীর্ষ আদালত। আদালত বুঝিয়ে দিয়েছে, পান থেকে চুন খসলে স্বামী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এই আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
Leave a Reply