ছুটি কাটাতে উড়ে গেছেন দুবাইতে। শেষ মুহূর্তের প্যাকিংয়ের ফাঁকেই বঙ্গভূমি লাইভকে একান্ত সাক্ষাৎকার ঋতাভরী চক্রবর্তীর (Ritabhari Chakraborty)। শুভম সেনগুপ্তকে সাফ বলে দিলেন, ‘যে অভিনেতা, অভিনেত্রী এই মুহূর্তে রাজনীতিতে রয়েছেন, তাঁরা কেউই যে মানুষের সেবা করতে গেছেন সেরকমটা নয়!’
বঙ্গভূমি লাইভ: প্রথমেই যেটা জানতে চাইব, জোড়া অস্ত্রোপচারের পর ওজন বেড়ে গিয়েছিল আপনার। সেটা নিয়ে নানা বিদ্রুপও শুনতে হয়েছিল। হয়তো মানসিক ‘ট্রমা’–র মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছিল। বডি শেমিংয়ের সামনে পড়তে হয়েছিল। এতকিছুর মধ্যেও নিজেকে কীভাবে পজিটিভ রাখেন?
ঋতাভরী: আমার মনে হয় সেরকম পরিস্থিতিতে নিজের মনের জোরটাই আসল। আরও গুরুত্বপূর্ণ এটা মনে রাখা যে ‘কে আমি?’ ভেতর থেকে ‘আমি’ কেমন সেটার সঙ্গে টাচে থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব সময় তেমনই একজন। গত বছরটা আমার জীবনের ভীষণ কষ্টের হলেও যতই মন থেকে দুর্বল থাকি আমি জানতাম, লড়াই করে ঠিক বেরিয়ে আসব। দু’–দুটো অপারেশন, এতবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি তবুও আমি এফআইআর–এর শুটিং করেছি, গান রিলিজ করেছি, গ্র্যাজুয়েশনও কমপ্লিট করেছি। ওরকম পরিস্থিতিতে এই সব কিছুই আমার কাছে সাবলীলভাবে চলে এসেছে। আমি জানি, আমাকে কেউ হারাতে পারবে না, সে যে পরিস্থিতিই হোক। আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। তবু মনে হতো আরও কিছু করি, কিন্তু শরীরের কথা ভেবে, মনের কথা ভেবে একটা গণ্ডির মধ্যে নিজেকে রেখেছি। শুধু আমি কেন, সবারই জীবনে কোনও না কোনও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি আসে। তখন মনে হয় পায়ের তলায় মাটিটা একটু নড়ে গেল। কিন্তু নিজের সম্বিত ফিরে পাওয়া মাত্র আমি লড়াই করেছি, কাজ করেছি। এটাই আমি।
বঙ্গভূমি লাইভ: দু–’দুটো অপারেশন, তারপর ডিপ্রেশন, এর পরও ঋতাভরী যখন হুইলচেয়ারে বসে কোনও ইভেন্টে পৌঁছন, সেই ভিডিও নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন!
ঋতাভরী: হ্যাঁ, পা ভেঙে গেছিল তবু আমি গেছিলাম। আসলে আমি সেরকম ভাবে কখনও ভেবেই দেখিনি।

বঙ্গভূমি লাইভ: তবু ইভেন্ট তো, অনেকের মতোই কোনও দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যেতেই পারতেন। নিজের শরীর বলে কথা!
ঋতাভরী: অনেকের কথা যখন বললেন, আমিও অনেকের মতোই অনেক চেষ্টা করে, স্ট্রাগল করে এসেছি। আমারও তো কিছু দায় থাকে আমার নিজের প্রতি।
বঙ্গভূমি লাইভ: প্রেমের সপ্তাহ গেল। ঋতাভরীর এমন কোনও মজার ঘটনা আছে কি যা প্রেম বা প্রেম নিবেদন রিলেটেড?
ঋতাভরী: স্কুলে পড়াকালীন ভ্যালেন্টাইন্স ডে (Valentines day) বলতে সেরকম কিছুই তেমন ছিল না। তবে আর্চিজ গ্যালারির দিন ছিল সে সময়টা। কার্ড দেওয়া, ফুল দেওয়া এসবই হতো তখন। কিন্তু যখন বড় হলাম সত্যি বলতে কী কাজের ব্যস্ততায় নারী দিবস হোক, ভালবাসার দিন হোক, আলাদা করে আমি পালন করি না। ভালবাসার দিন সবাই ভালবাসা নিয়ে কথা বলতে চায়, নারী দিবসে নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে চায়। আমার কাছে এই দিনগুলো শুধু এটুকুই, যে দিনে এই বিষয়ে কথা বলা যেতে পারে, মানুষের কাছে পৌঁছনো যেতে পারে।
বঙ্গভূমি লাইভ: ঋতাভরীর নিজের আরও একটি পরিবার আছে। যদি ভুল না করি, সেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭৬ জন। ওদের সঙ্গেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করলেন। কেমন কাটল?

ঋতাভরী: হ্যাঁ, আইডিয়াল স্কুল ফর ডেফ। এই স্কুলটা আমিই চালাই। আমার আঠের বছর বয়সে এই স্কুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। বাড়ির খুব কাছেই এই স্কুল। এক–দু’বছরের মাথায় আমি বুঝতে পারি এর দায়িত্ব না নিই, তাহলে এই স্কুল নাও থাকতে পারে। তখন এই স্কুলে ত্রিশ জনের মতো ছাত্র-ছাত্রী ছিল। আমি জানতামও না, একটা স্কুল কীভাবে চালাতে হয়। জানতাম, আমি না দেখলে এই স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। প্রায় এগারো বছর হয়ে গেল এই স্কুলের সঙ্গে যুক্ত। আমি ফান্ড তুলে চালাই সে জন্যে নয়, বাচ্চাগুলোর সঙ্গে বিশেষ দিনগুলো কাটানো হল ‘পার্ট অফ মাই রুল’।
বঙ্গভূমি লাইভ: অনেকেই তো এখন মানুষের জন্য কাজ করতে রাজনীতিতে চলে যাচ্ছেন। আপনি ব্যাতিক্রম। ব্যাক্তিগতভাবে ঋতাভরীর কাছে তাহলে রাজনীতি কী?
ঋতাভরী: আমার মতে, যে অভিনেতা, অভিনেত্রী এই মুহূর্তে রাজনীতিতে রয়েছেন, তাঁরা কেউই যে মানুষের সেবা করতে গেছেন সেরকমটা নয়। পলিটিক্যাল পার্টি মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য সেই সব অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম এবং যশকে কাজে লাগিয়েছে। তাঁরাই যখন ক্ষমতায় এলেন, তখন হালটা ধরলেন যে, ‘মানুষের জন্য কিছু করব’। সত্যি কথাটা আমরা সবাই জানি, মানুষের কল্যাণ করব বলে শেষ ক’বছরে কেউ রাজনীতিতে আসেননি। এখনও পর্যন্ত যেভাবে আলোচনা হয় বোঝাই যায় পশ্চিমবঙ্গ একটা হাসাহাসির জায়গায় পৌঁছে গেছে। এখন অভিনেতা-অভিনেত্রী মানেই সে কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আছে। আমি কি নিজে অফার পাইনি? কিন্তু আমি এসব চাই না। আমি সত্যিই মানুষের জন্য কাজ করতে চাই এবং করি। কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করা মানে আমি আমার এতো বছরের ক্রেডিট ওঁদের হাতে তুলে দিলাম। সেটা আমি কখনওই করতে পারব না। মানুষের কল্যাণ করার জন্য রাজনীতিতে ঢোকার কোনও দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। এখন কোনও রাজনৈতিক দলে যাওয়া মানে আমার কাছে হাত-পা বেঁধে যাওয়া।
বঙ্গভূমি লাইভ: এসব কিছু থেকে সরে এসে আমি যে বিষয়টা জানতে চাই তা হল আপনি ভীষণ ভাল মিনিয়েচার (Miniature) বানাতে পারেন, এমন শৈল্পিক ঋতাভরীর আত্মপ্রকাশ ঘটল কবে?

ঋতাভরী: আমি যখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, তখন লিয়ঁ নামে ফ্রান্সের একটা ছোট্ট শহরে গেছিলাম। সেখানে গোটা একটা মিউজিয়াম জুড়ে সিনেমার জন্য তৈরি করা এমন অনেক মিনিয়েচার মডেল ছিল। শহর ধ্বংস হয়ে যাওয়া, বড় কোনও ঢেউ এসে একটা গোটা শহরকে গিলে ফেলল— এরকম সব ডেমনস্ট্রেশন দেখে আমার এত ইন্টারেস্টিং লেগেছিল, ফিরে এসে হাতের কাছে যা ছিল তাই দিয়ে প্রথম একটা মিনিয়েচার বানাই। এটা এখন আমার কাছে একটা হবি। এর সঙ্গে কোনও কমার্শিয়াল সাকসেস রাখতে চাই না। এটা শুধু আমার জন্য।
বঙ্গভূমি লাইভ: এমন কোনও মুহূর্ত, যা আপনি এই মিনিয়েচারে ফুটিয়ে তুলতে চান?
ঋতাভরী: অনেকগুলো চ্যাপ্টার আমার মাথায় আছে, যেগুলো আমি বানাতে চাই। যখনই আমি মিনিয়েচার বানাই, আমি একটা গল্প ভাবি, যেমন এখানে এরা থাকে, এভাবেই এরা জীবনযাপন করে। সেভাবেই প্রত্যেকটা চ্যাপ্টার আমি মিনিয়েচারে তুলে ধরব।
বঙ্গভূমি লাইভ: সব গল্পেরই একটা চ্যাপ্টার যেমন থাকে, তেমনই ঋতাভরীর জীবনের একটা নতুন চ্যাপ্টার হতে চলেছে, ‘বিয়ে’। কবে বিয়ে করছেন?
ঋতাভরী: খুব খুব তাড়াতাড়ি। আমি এখন শুধু কাজে আর নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখছি। তবে যেটা আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি, আমি আমার মনের মানুষ পেয়ে গেছি। তাই আর দেরি নয়, খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে করছি।
Leave a Reply